দান সম্পর্কে পরিব্রাজক বচ্ছগোত্রের প্রশ্ন
এক সময় বচ্ছগোত্র নামক এক পরিব্রাজক ভগবান বুদ্ধের নিকট উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন-
পরিব্রাজক বচ্ছগোত্র - ভগবান গৌতম, আমি শুনেছি, 'আপনি শুধু আপনার শিষ্যমণ্ডলীকেই দান দেবার জন্য বলেন। তাঁদেরকে দান দিলেই মহাফল হবে, অন্য কাউকে দান দিলে তেমন ফল হবে না।' এরূপে আপনি উপদেশ দিয়ে থাকেন! ইহা কী সত্য?
মহাকারুণিক বুদ্ধ - প্রত্যুত্তরে দেশনা করলেন, বচ্ছ আমি এ বিষয়ে কী বলি, শোন- 'যে অপরকে দান দিতে বারণ করে, তার তিনটি বিষয়ে অন্তরায় ঘটে।
প্রথমতঃ "দায়কস্স পুঞ্ঞন্তরায়কারো হোতি" - সে দায়কদের পূণ্যের অন্তরায়কারী হয়। এতে বহু অপূণ্যের ভাগী হয়।
দ্বিতীয়তঃ "পটিগ্গাহকানং লাভন্তুরায়কারো হোতি" - দান গ্রহীতাদরে অন্তরায়কারী হয়। এতেও প্রভূত পাপের ভাগী হয়।
তৃতীয়তঃ "পুব্বেব খো পনস্স অত্তা খাতা চ হোতি উপহতো চ" - সে নিজেই নিজের অকীর্তি সাধন পূর্বক নিজেকে মর্যাদার দিক দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে থাকে।
হে বচ্ছ, আমি একথাও বলছি যে-
"কোন পঁচা নালায় বা কূপে যেসমস্ত প্রাণী উৎপন্ন হয়ে থাকে, যদি কোন পূণ্যাকাঙ্খী ব্যক্তি উচ্ছিষ্ট পাত্র ধৌত জল নিক্ষেপ করে এরূপ কামনা করে যে, এখানের প্রাণীসমূহ আমার প্রদত্ত এই উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবন ধারণ করুক। এতেও প্রভূত পূণ্য অর্জিত হবে।"
"যদি কেউ আহার গ্রহণ শেষে কোন উন্মুক্ত স্থানে বা নালায় কুলকুচা নিক্ষেপ করে এরূপ কামনা করে যে, এখানের প্রাণীসমূহ আমার প্রদত্ত এই উচ্ছিষ্ট (কুলকুচার সাথে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছোট ছোট খাদ্য কণা) খেয়ে জীবন ধারণ করুক। এতেও প্রভূত পূণ্য সম্পদ অর্জিত হবে।"
"যদি কেউ গাছের পরিবৃদ্ধির কথা ভেবে গৃহের নিক্ষেপযোগ্য ছাই কিংবা জল গাছের গোড়ায় ঢালে/নিক্ষেপ করে, তাতেও সে প্রভূত পূণ্য লাভ করতে সক্ষম হয়।" সুতরাং, মানুষকে দান দিলে যে, পূণ্য হবেনা এ কথা কে বলে? তবে বচ্ছ, আমি এ কথা বলি যে, শীলবান ব্যক্তিকে দান দিলে মহাফল হয়। বিষয়টা এরকম-
ক. অনুর্বর ক্ষেত্রে বহু বীজ বপিত হলেও তাতে যেমন বহু ফল উৎপন্ন হয় না, তেমনি দুঃশীলদিগকে বহু দান করলেও বিপুল পূণ্যফল লাভ হয় না।
খ. উর্বর ক্ষেত্রে অল্পমাত্র বীজ বপিত হলেও যেরূপ বহু ফল উৎপন্ন হয়, সেরূপ শীলবান ও গুণবানদিগকে অল্পমাত্রও দানাদি (পূজা-সৎকার) করলে বিপুল পূণ্যফল লাভ হয়।
সুতরাং, 'বিচেয্য দানং দাতব্বং যত্থ দিন্নং মহাপ্ফলং' যেরূপ ক্ষেত্রে দান দিলে মহাফল হয়, সেরূপ পূণ্যক্ষেত্র অন্বেষণ অর্থাৎ বিচার-বিবেচনা করে দান দেওয়া উত্তম এবং মহাফলদায়ক। দশক অঙ্গুত্তরে ও প্রেতবত্থু গ্রন্থে উক্ত আছে- শীলবানদিগকে শ্রদ্ধার সাথে এক চামচ মাত্র অন্ন দানেও সুগতি লাভ হয়। দানের পূণ্যফলের তারতম্যে ক্ষেত্রই মূখ্য, তবে শ্রদ্ধা সহকারে দান দিলে তার পূণ্যফল হতে দায়ক কখনো বঞ্চিত হবে না।
উপরোক্ত, পরিব্রাজক বচ্ছগোত্রেরে দান সম্পর্কিত প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে বুদ্ধের দেশনা তথা ধর্মকথা বর্ণনার মধ্যদিয়ে যে পূণ্য সম্পদ সঞ্চিত হয়েছে, তা শক্তিশালী কি দুর্বল, উচ্চ, মধ্য বা নিচু গোত্রের, ক্ষুদ্র বা বৃহৎ, দৃশ্য বা অদৃশ্য, কাছের বা দূরের, জীবিত বা জন্ম প্রত্যাশী-সকল প্রাণীরই সুখী-সুন্দর আগামীর প্রার্থনায় দান করছি।
সাধু সাধু সাধু
জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক।
পরিব্রাজক বচ্ছগোত্র - ভগবান গৌতম, আমি শুনেছি, 'আপনি শুধু আপনার শিষ্যমণ্ডলীকেই দান দেবার জন্য বলেন। তাঁদেরকে দান দিলেই মহাফল হবে, অন্য কাউকে দান দিলে তেমন ফল হবে না।' এরূপে আপনি উপদেশ দিয়ে থাকেন! ইহা কী সত্য?
মহাকারুণিক বুদ্ধ - প্রত্যুত্তরে দেশনা করলেন, বচ্ছ আমি এ বিষয়ে কী বলি, শোন- 'যে অপরকে দান দিতে বারণ করে, তার তিনটি বিষয়ে অন্তরায় ঘটে।
প্রথমতঃ "দায়কস্স পুঞ্ঞন্তরায়কারো হোতি" - সে দায়কদের পূণ্যের অন্তরায়কারী হয়। এতে বহু অপূণ্যের ভাগী হয়।
দ্বিতীয়তঃ "পটিগ্গাহকানং লাভন্তুরায়কারো হোতি" - দান গ্রহীতাদরে অন্তরায়কারী হয়। এতেও প্রভূত পাপের ভাগী হয়।
তৃতীয়তঃ "পুব্বেব খো পনস্স অত্তা খাতা চ হোতি উপহতো চ" - সে নিজেই নিজের অকীর্তি সাধন পূর্বক নিজেকে মর্যাদার দিক দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে থাকে।
হে বচ্ছ, আমি একথাও বলছি যে-
"কোন পঁচা নালায় বা কূপে যেসমস্ত প্রাণী উৎপন্ন হয়ে থাকে, যদি কোন পূণ্যাকাঙ্খী ব্যক্তি উচ্ছিষ্ট পাত্র ধৌত জল নিক্ষেপ করে এরূপ কামনা করে যে, এখানের প্রাণীসমূহ আমার প্রদত্ত এই উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবন ধারণ করুক। এতেও প্রভূত পূণ্য অর্জিত হবে।"
"যদি কেউ আহার গ্রহণ শেষে কোন উন্মুক্ত স্থানে বা নালায় কুলকুচা নিক্ষেপ করে এরূপ কামনা করে যে, এখানের প্রাণীসমূহ আমার প্রদত্ত এই উচ্ছিষ্ট (কুলকুচার সাথে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছোট ছোট খাদ্য কণা) খেয়ে জীবন ধারণ করুক। এতেও প্রভূত পূণ্য সম্পদ অর্জিত হবে।"
"যদি কেউ গাছের পরিবৃদ্ধির কথা ভেবে গৃহের নিক্ষেপযোগ্য ছাই কিংবা জল গাছের গোড়ায় ঢালে/নিক্ষেপ করে, তাতেও সে প্রভূত পূণ্য লাভ করতে সক্ষম হয়।" সুতরাং, মানুষকে দান দিলে যে, পূণ্য হবেনা এ কথা কে বলে? তবে বচ্ছ, আমি এ কথা বলি যে, শীলবান ব্যক্তিকে দান দিলে মহাফল হয়। বিষয়টা এরকম-
ক. অনুর্বর ক্ষেত্রে বহু বীজ বপিত হলেও তাতে যেমন বহু ফল উৎপন্ন হয় না, তেমনি দুঃশীলদিগকে বহু দান করলেও বিপুল পূণ্যফল লাভ হয় না।
খ. উর্বর ক্ষেত্রে অল্পমাত্র বীজ বপিত হলেও যেরূপ বহু ফল উৎপন্ন হয়, সেরূপ শীলবান ও গুণবানদিগকে অল্পমাত্রও দানাদি (পূজা-সৎকার) করলে বিপুল পূণ্যফল লাভ হয়।
সুতরাং, 'বিচেয্য দানং দাতব্বং যত্থ দিন্নং মহাপ্ফলং' যেরূপ ক্ষেত্রে দান দিলে মহাফল হয়, সেরূপ পূণ্যক্ষেত্র অন্বেষণ অর্থাৎ বিচার-বিবেচনা করে দান দেওয়া উত্তম এবং মহাফলদায়ক। দশক অঙ্গুত্তরে ও প্রেতবত্থু গ্রন্থে উক্ত আছে- শীলবানদিগকে শ্রদ্ধার সাথে এক চামচ মাত্র অন্ন দানেও সুগতি লাভ হয়। দানের পূণ্যফলের তারতম্যে ক্ষেত্রই মূখ্য, তবে শ্রদ্ধা সহকারে দান দিলে তার পূণ্যফল হতে দায়ক কখনো বঞ্চিত হবে না।
উপরোক্ত, পরিব্রাজক বচ্ছগোত্রেরে দান সম্পর্কিত প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে বুদ্ধের দেশনা তথা ধর্মকথা বর্ণনার মধ্যদিয়ে যে পূণ্য সম্পদ সঞ্চিত হয়েছে, তা শক্তিশালী কি দুর্বল, উচ্চ, মধ্য বা নিচু গোত্রের, ক্ষুদ্র বা বৃহৎ, দৃশ্য বা অদৃশ্য, কাছের বা দূরের, জীবিত বা জন্ম প্রত্যাশী-সকল প্রাণীরই সুখী-সুন্দর আগামীর প্রার্থনায় দান করছি।
সাধু সাধু সাধু
জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক।