সেরিবাণিজ জাতক
অতীতে বোধিসত্ত্বের রাজত্বকালে অন্ধপুর নামে এক নগরী ছিল। এই নগরীতে দু’জন ফেরিওয়ালা বাস করত। একজনের নাম সেরিবান, অন্যজনের নাম সেরিবা। তারা ফেরি করতে গেলে কোন রাস্তায় যাবে ঠিক করে নিত। একজন যেদিকে যেত অন্যজনও পরে সেদিকে যেতে পারত। এক সময়ে অন্ধপুরে ছিল এক সম্পদশালী শ্রেষ্ঠী পরিবার। পরবর্তীতে এই পরিবার তাদের ধনসম্পদ হারিয়ে ফেলে। ফলে তারা গরীব হয়ে যায়। সেই দরিদ্র পরিবারে মাত্র দুই জন জীবিত ছিল। একজন বালিকা ও তার বৃদ্ধ ঠাকুরমা। তারা অতি কষ্টের মধ্যে দিন কাটাত।
সুদিনে এই পরিবারের প্রধান একটি সোনার থালায় খাবার খেতেন। সেটি তখনও ছিল। কিন্তু অনেকদিন ব্যবহার না করাতে থালাটি ময়লা হয়ে গিয়েছিল। সোনার থালা বলে মনেই হতো না। ফেরিওয়ালা সেরিবা ছিল অতি লোভী ও ধূর্ত। একদিন সে শ্রেষ্ঠীর বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ‘কলসী কিনবে ক ল সী, কলসী কিনবে ক ল সী’-এভাবে সে ডাক দিল। তা শুনে বালিকাটি বলল-ঠাকুরমা আমাকে একটি কলসী কিনে দাও না।
ঠাকুরমা বললেন-বাছা, আমরা গরিব, পয়সা পাবো কোথায়? বালিকা সোনার থালাটি তাকে দিল। বলল-‘এটাতো আমাদের কোনো কাজে আসে না এটি দিয়ে নাও’। ঠাকুরমা ফেরিওয়ালাকে ডাকলেন। তাকে বসতে বলে- সোনার থালাটি দিলেন। বললেন- এর বদলে আমার নাতনীকে একটা কোনো জিনিস দাও। ফেরিওয়ালা সেরিবা থালাটি দু’একবার উল্টে পাল্টে দেখল। পরীক্ষা করে দেখল থালাটি সোনার। তার মনে দুর্বুদ্ধি এল- দুই জনকে ঠকিয়ে কীভাবে সোনার থালাটি নেওয়া যায়! সে বলল-এটার পরিবর্তে সিকি পয়সাও তো দেওয়া যাবে না।
সেরিবা অবজ্ঞার ভান করে থালাটি মাটিতে ফেলে রেখে চলে গেল। একটু পরেই-ফেরিওয়ালা সেরিবান এ পথে এল। কলসী কিনবে, কলসী কিনবে-বলতে বলতে সেই বাড়ির সামনে দাঁড়াল। বালিকা তার ঠাকুরমাকে গিয়ে আবার বলল।
ঠাকুরমা বললেন-থালাটির কোনো দাম নেই। কোনো কিছুই ফেরিওয়ালা দেবে না।
বালিকা বলল-ঠাকুরমা, ওই ফেরিওয়ালা ভালো লোক নয়। এই লোকটাকে ভালো মনে হচ্ছে। এ মনেহয় থালাটি নিয়ে কোনো জিনিস দেবে।
ঠাকুরমা সেরিবানকে ডেকে থালাটি তার হাতে দিলেন। সেরিবান থালটি দেখা মাত্রই বুঝতে পারল এটি সোনার। সেরিবান বলল- মা, এ থালটির দাম লক্ষ মুদ্রা। আমার হাতে এত টাকা নেই।
ঠাকুরমা বললেন-এই মাত্র একজন ফেরিওয়ালা এসেছিল। সে বলেছে, এর মূল্য সিকি পয়সাও নয়। আপনি ভালো লোক। থালাটি আপনাকেই দেব। আপাতত বিনিময়ে যা পারেন দিয়ে যান।
সেরিবানের হাতে পাঁচশত টাকা ও কিছু পণ্যদ্রব্য ছিল। সেরিবান আটটি টাকা ও দাঁড়ি পাল্লা নিজের কাছে রাখল। অবশিষ্ট টাকা ও পণ্যসামগ্রী ঠাকুরমা ও নাতনিকে দিল।এরপর সেরিবান থালাটি নিয়ে রওনা দিল ও নদীর তীরে উপস্থিত হল। নদীর তীরে ছিল একটি নৌকা। সেরিবান মাঝিকে বলল-তাড়াতাড়ি আমাকে পার করে দাও।
এদিকে লোভী ফেরিওয়ালা সেরিবা আবার ফিরে এল। বৃদ্ধাকে বলল- ভেবে দেখলাম, তোমাকে কিছু টাকা দেব। থালাটি নিয়ে এস। ঠাকুরমা বললেন- সে কী কথা বাপু? তুমি না বললে এর দাম এক পয়সাও নয়। এইমাত্র অন্য একজন ফেরিওয়ালা অনেক টাকা আর জিনিস দিল। পরিবর্তে সোনার থালাটি তাকেই দিলাম। লোকটি খুবই ভালো। মানুষকে ঠকায় না।একথা শোনা মাত্র লোভী সেরিবার মাথা ঘুরে গেল। সে পাগলের মত ছুটাছুটি করতে লাগল। সে উতভ্রান্তের মত তার কাছে যে সব টাকা ও পয়সা ও মালপত্র ছিল তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিল।
লোভী সেরিবা দৌড়াতে দৌড়াতে সেরিবানকে ধরতে নদীর তীরে গেল। সৎ লোক সেরিবান তখন নদী পার হয়ে অপর তীরে পৌঁছে গেল। দুষ্ট বুদ্ধির লোভী সেরিবা নদীর ওই তীরে হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইল। রাগে, ক্ষোভে, অনুতাপে জ্ঞান হারিয়ে সেখানেই সেরিবার মৃত্যু হলো।
অপর দিকে সৎ ফেরিওয়ালা সেরিবান সেই সোনার থালাটি বিক্রি করে অনেক টাকা লাভ করে। সেই টাকায় তিনি অনেক দান ধর্ম ও সাহায্য করে পুণ্য অর্জন করল। জীবনে সুখী হল।
উপদেশ: লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।
সুদিনে এই পরিবারের প্রধান একটি সোনার থালায় খাবার খেতেন। সেটি তখনও ছিল। কিন্তু অনেকদিন ব্যবহার না করাতে থালাটি ময়লা হয়ে গিয়েছিল। সোনার থালা বলে মনেই হতো না। ফেরিওয়ালা সেরিবা ছিল অতি লোভী ও ধূর্ত। একদিন সে শ্রেষ্ঠীর বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ‘কলসী কিনবে ক ল সী, কলসী কিনবে ক ল সী’-এভাবে সে ডাক দিল। তা শুনে বালিকাটি বলল-ঠাকুরমা আমাকে একটি কলসী কিনে দাও না।
ঠাকুরমা বললেন-বাছা, আমরা গরিব, পয়সা পাবো কোথায়? বালিকা সোনার থালাটি তাকে দিল। বলল-‘এটাতো আমাদের কোনো কাজে আসে না এটি দিয়ে নাও’। ঠাকুরমা ফেরিওয়ালাকে ডাকলেন। তাকে বসতে বলে- সোনার থালাটি দিলেন। বললেন- এর বদলে আমার নাতনীকে একটা কোনো জিনিস দাও। ফেরিওয়ালা সেরিবা থালাটি দু’একবার উল্টে পাল্টে দেখল। পরীক্ষা করে দেখল থালাটি সোনার। তার মনে দুর্বুদ্ধি এল- দুই জনকে ঠকিয়ে কীভাবে সোনার থালাটি নেওয়া যায়! সে বলল-এটার পরিবর্তে সিকি পয়সাও তো দেওয়া যাবে না।
সেরিবা অবজ্ঞার ভান করে থালাটি মাটিতে ফেলে রেখে চলে গেল। একটু পরেই-ফেরিওয়ালা সেরিবান এ পথে এল। কলসী কিনবে, কলসী কিনবে-বলতে বলতে সেই বাড়ির সামনে দাঁড়াল। বালিকা তার ঠাকুরমাকে গিয়ে আবার বলল।
ঠাকুরমা বললেন-থালাটির কোনো দাম নেই। কোনো কিছুই ফেরিওয়ালা দেবে না।
বালিকা বলল-ঠাকুরমা, ওই ফেরিওয়ালা ভালো লোক নয়। এই লোকটাকে ভালো মনে হচ্ছে। এ মনেহয় থালাটি নিয়ে কোনো জিনিস দেবে।
ঠাকুরমা সেরিবানকে ডেকে থালাটি তার হাতে দিলেন। সেরিবান থালটি দেখা মাত্রই বুঝতে পারল এটি সোনার। সেরিবান বলল- মা, এ থালটির দাম লক্ষ মুদ্রা। আমার হাতে এত টাকা নেই।
ঠাকুরমা বললেন-এই মাত্র একজন ফেরিওয়ালা এসেছিল। সে বলেছে, এর মূল্য সিকি পয়সাও নয়। আপনি ভালো লোক। থালাটি আপনাকেই দেব। আপাতত বিনিময়ে যা পারেন দিয়ে যান।
সেরিবানের হাতে পাঁচশত টাকা ও কিছু পণ্যদ্রব্য ছিল। সেরিবান আটটি টাকা ও দাঁড়ি পাল্লা নিজের কাছে রাখল। অবশিষ্ট টাকা ও পণ্যসামগ্রী ঠাকুরমা ও নাতনিকে দিল।এরপর সেরিবান থালাটি নিয়ে রওনা দিল ও নদীর তীরে উপস্থিত হল। নদীর তীরে ছিল একটি নৌকা। সেরিবান মাঝিকে বলল-তাড়াতাড়ি আমাকে পার করে দাও।
এদিকে লোভী ফেরিওয়ালা সেরিবা আবার ফিরে এল। বৃদ্ধাকে বলল- ভেবে দেখলাম, তোমাকে কিছু টাকা দেব। থালাটি নিয়ে এস। ঠাকুরমা বললেন- সে কী কথা বাপু? তুমি না বললে এর দাম এক পয়সাও নয়। এইমাত্র অন্য একজন ফেরিওয়ালা অনেক টাকা আর জিনিস দিল। পরিবর্তে সোনার থালাটি তাকেই দিলাম। লোকটি খুবই ভালো। মানুষকে ঠকায় না।একথা শোনা মাত্র লোভী সেরিবার মাথা ঘুরে গেল। সে পাগলের মত ছুটাছুটি করতে লাগল। সে উতভ্রান্তের মত তার কাছে যে সব টাকা ও পয়সা ও মালপত্র ছিল তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিল।
লোভী সেরিবা দৌড়াতে দৌড়াতে সেরিবানকে ধরতে নদীর তীরে গেল। সৎ লোক সেরিবান তখন নদী পার হয়ে অপর তীরে পৌঁছে গেল। দুষ্ট বুদ্ধির লোভী সেরিবা নদীর ওই তীরে হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইল। রাগে, ক্ষোভে, অনুতাপে জ্ঞান হারিয়ে সেখানেই সেরিবার মৃত্যু হলো।
অপর দিকে সৎ ফেরিওয়ালা সেরিবান সেই সোনার থালাটি বিক্রি করে অনেক টাকা লাভ করে। সেই টাকায় তিনি অনেক দান ধর্ম ও সাহায্য করে পুণ্য অর্জন করল। জীবনে সুখী হল।
উপদেশ: লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।