গুরুকর্ম ও কর্মবিপাক : ঋদ্ধিশ্রেষ্ঠ মহামৌদগল্যায়ন স্থবিরের পরিনির্বাণ
এক সময় ভিক্ষু সংঘ মহামৌদগল্যায়ন স্থবিরের হত্যা সম্পর্কে আলাপে আবেগ জড়িত, শোকবহ হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ভগবান বুদ্ধ ভিক্ষু সংঘের এরূপ অবস্থা অবগত হয়ে বললেন, হে ভিক্ষুগণ! এ হল কর্মের অলঙ্ঘনীয় বিধান। এ জগতে এমন কোনো স্থান নেই যেখান হতে নিজের কর্ম হতে রক্ষা পাওয়া যায়। এ হলো গুরুকর্ম। ভন্তে ভগবান, মহামৌদগল্যায়ন স্থবিরের জীবনে সেইরূপ কর্মের কোনো প্রভাব ছিল কি?
ভিক্ষু সংঘের এরূপ প্রশ্নের উত্তরে সর্বজ্ঞ-সর্বদর্শী ভগবান বুদ্ধ দেশনা করলেন, হ্যাঁ ভিক্ষুগণ, মহামৌদগল্যায়ন স্থবির অতীত এক জন্মে নিজের স্ত্রীর পরামর্শে পিতা-মাতাকে আঘাত করেছিল। সেই পাপের ফলে জন্ম-জন্মান্তরে তাঁকে বহুবার নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় এবং সেই কৃতকর্মের কারণে অগ্রশ্রাবক হয়েও তিনি পরিত্রাণ পেলেন না। কৃতকর্মের ফল ভোগ করতেই হলো।
এবার আমরা কীভাবে ঋদ্ধিশ্রেষ্ঠ মহামৌদগল্যায়ন স্থবির দস্যুদের হাতে নিহত হয়েছেন সে কাহিনী সম্পর্কে জানব।
একসময় নগ্ন সন্ন্যাসীরা স্থবির মহামৌদগল্যায়কে মারার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হলেন। তাঁরা মহামৌদগল্যায় স্থবির কোথায় অবস্থান করেন সে সম্পর্কে অবগত হয়ে আপন লোকজনের কাছ হতে চাঁদা সংগ্রহ করে রাজগৃহের সুরাপায়ী দস্যু-তস্করদের সাথে মিলিত হয়ে টাকার বিনিময়ে স্থবির মহামৌদগল্যায়নকে হত্যা করার জন্য তাদের নিয়োগ দিলেন। সুরাপায়ীরা স্বীকৃতি প্রদান পূর্বক প্রচুর মাংস ও সুরা পান করে কালশিলা পর্বতে স্থবিরের সন্ধানে যাত্রা শুরু করে দিল। দূর থেকে স্থবির তস্করদের লক্ষ করলেন এবং তাদের মনোভাব জ্ঞাত হয়ে তিনি আপন কুঠির দরজা খোলা রেখে আত্মগোপন করে থাকলেন।
এভাবে দস্যু-তস্কররা তিনবার চেষ্টা চালিয়েও মহামৌদগল্যায়ন স্থবিরকে হত্যা করতে পারল না। স্থবির অন্তর্দৃষ্টিতে জ্ঞাত হলেন দস্যু-তস্করদের পরিকল্পনা সম্পর্কে। তিনি অতীত এক জন্মে নিজের স্ত্রীর পরামর্শে পিতা-মাতাকে আঘাত করেছিলেন। মহামৌদল্যায়ন স্থবির যেহেতু ঋদ্ধিশ্রেষ্ঠ অর্হৎ, সুতরাং এ জীবন তাঁর অন্তিম দেহধারণ, তাঁর সংসার-জীবনযাত্রা চিরদিনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে অথচ তাঁকে আপন কৃতকর্মের ফল ভোগ করতেই হবে। সংসারে গুরুকর্ম হল পাঁচটি। এসব কর্মের বিপাক থেকে মানুষ আত্মরক্ষা করতে পারে না বলে এর নাম “গুরুকর্ম”। স্থবির জ্ঞানবলে অতীত বিষয়ে চিন্তা করে ধ্যানাসন ত্যাগ করলেন না। দস্যুরা এবার সুযোগ পেয়ে স্থবিরকে হত্যা করে স্তূপীকৃত অবস্থায় রেখে চলে গেল। কার্তিকী পূর্ণিমার পরবর্তী পঞ্চদশীতে মহামৌদগল্যায়ন স্থবির পরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন।
পঞ্চ গুরুকর্ম :
সংসারে গুরুকর্ম হলো পাঁচটি। এই পাঁচটি গুরুকর্ম বা কর্মান্তরায়কর ধর্মের মধ্যে যেকোন একটি কর্ম কারো দ্বারা সম্পাদিত হলে মৃত্যুর পর সে মহা পাপীকে একান্তই নরকে পতিত হতে হয়। ইহা অকুশল গুরুকর্ম। তাই মৃত্যুর পর কোন পুণ্যকর্ম সেই মহাপাপীকে নরক-পতন হতে রক্ষা করতে পারে না। এজন্য এ কর্মসমূহকে 'আনন্তরিক কর্ম'ও বলা হয়। এই গুরুকর্ম বা আনন্তরিয় কর্মের বিপাক থেকে মানুষ আত্মরক্ষা করতে পারে না।
সেই পঞ্চ গুরুকর্ম হল-
ক. মাতৃহত্যা,
খ. পিতৃহত্যা,
গ. অর্হৎ হত্যা,
ঘ. দ্বেষচিত্তে বুদ্ধের শরীর হতে রক্তপাত এবং
ঙ. সংঘভেদ।
আমরা প্রতিদিন ভাল-খারাপ বিভিন্ন কর্মই সম্পাদন করি। কিন্তু আমাদের এই কর্ম সম্পর্কে সতত সজাগ থাকা প্রয়োজন। সর্বদা আমাদের মনে রাখতে হবে, শুভ কর্মের শুভফল আর অশুভ কর্মের অশুভ ফল। আর উপরোক্ত পঞ্চ গুরুকর্ম হতে সর্বদা নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। পরিশেষে বুদ্ধের পরিভাষায় বলতে চাই, কর্মই আমার স্বকীয়, আমি কর্মেরই উত্তরাধিকারী, কর্মই আমার যোনি বা জন্মের কারণ। কর্মই আমার বন্ধু, কর্মই আমার গতি, কর্ম কুশল হোক বা অকুশল হোক যেরূপ কর্ম আমি সম্পাদন করব, আমি সেরূপই ফল ভোগ করব।
ভিক্ষু সংঘের এরূপ প্রশ্নের উত্তরে সর্বজ্ঞ-সর্বদর্শী ভগবান বুদ্ধ দেশনা করলেন, হ্যাঁ ভিক্ষুগণ, মহামৌদগল্যায়ন স্থবির অতীত এক জন্মে নিজের স্ত্রীর পরামর্শে পিতা-মাতাকে আঘাত করেছিল। সেই পাপের ফলে জন্ম-জন্মান্তরে তাঁকে বহুবার নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় এবং সেই কৃতকর্মের কারণে অগ্রশ্রাবক হয়েও তিনি পরিত্রাণ পেলেন না। কৃতকর্মের ফল ভোগ করতেই হলো।
এবার আমরা কীভাবে ঋদ্ধিশ্রেষ্ঠ মহামৌদগল্যায়ন স্থবির দস্যুদের হাতে নিহত হয়েছেন সে কাহিনী সম্পর্কে জানব।
একসময় নগ্ন সন্ন্যাসীরা স্থবির মহামৌদগল্যায়কে মারার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হলেন। তাঁরা মহামৌদগল্যায় স্থবির কোথায় অবস্থান করেন সে সম্পর্কে অবগত হয়ে আপন লোকজনের কাছ হতে চাঁদা সংগ্রহ করে রাজগৃহের সুরাপায়ী দস্যু-তস্করদের সাথে মিলিত হয়ে টাকার বিনিময়ে স্থবির মহামৌদগল্যায়নকে হত্যা করার জন্য তাদের নিয়োগ দিলেন। সুরাপায়ীরা স্বীকৃতি প্রদান পূর্বক প্রচুর মাংস ও সুরা পান করে কালশিলা পর্বতে স্থবিরের সন্ধানে যাত্রা শুরু করে দিল। দূর থেকে স্থবির তস্করদের লক্ষ করলেন এবং তাদের মনোভাব জ্ঞাত হয়ে তিনি আপন কুঠির দরজা খোলা রেখে আত্মগোপন করে থাকলেন।
এভাবে দস্যু-তস্কররা তিনবার চেষ্টা চালিয়েও মহামৌদগল্যায়ন স্থবিরকে হত্যা করতে পারল না। স্থবির অন্তর্দৃষ্টিতে জ্ঞাত হলেন দস্যু-তস্করদের পরিকল্পনা সম্পর্কে। তিনি অতীত এক জন্মে নিজের স্ত্রীর পরামর্শে পিতা-মাতাকে আঘাত করেছিলেন। মহামৌদল্যায়ন স্থবির যেহেতু ঋদ্ধিশ্রেষ্ঠ অর্হৎ, সুতরাং এ জীবন তাঁর অন্তিম দেহধারণ, তাঁর সংসার-জীবনযাত্রা চিরদিনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে অথচ তাঁকে আপন কৃতকর্মের ফল ভোগ করতেই হবে। সংসারে গুরুকর্ম হল পাঁচটি। এসব কর্মের বিপাক থেকে মানুষ আত্মরক্ষা করতে পারে না বলে এর নাম “গুরুকর্ম”। স্থবির জ্ঞানবলে অতীত বিষয়ে চিন্তা করে ধ্যানাসন ত্যাগ করলেন না। দস্যুরা এবার সুযোগ পেয়ে স্থবিরকে হত্যা করে স্তূপীকৃত অবস্থায় রেখে চলে গেল। কার্তিকী পূর্ণিমার পরবর্তী পঞ্চদশীতে মহামৌদগল্যায়ন স্থবির পরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন।
পঞ্চ গুরুকর্ম :
সংসারে গুরুকর্ম হলো পাঁচটি। এই পাঁচটি গুরুকর্ম বা কর্মান্তরায়কর ধর্মের মধ্যে যেকোন একটি কর্ম কারো দ্বারা সম্পাদিত হলে মৃত্যুর পর সে মহা পাপীকে একান্তই নরকে পতিত হতে হয়। ইহা অকুশল গুরুকর্ম। তাই মৃত্যুর পর কোন পুণ্যকর্ম সেই মহাপাপীকে নরক-পতন হতে রক্ষা করতে পারে না। এজন্য এ কর্মসমূহকে 'আনন্তরিক কর্ম'ও বলা হয়। এই গুরুকর্ম বা আনন্তরিয় কর্মের বিপাক থেকে মানুষ আত্মরক্ষা করতে পারে না।
সেই পঞ্চ গুরুকর্ম হল-
ক. মাতৃহত্যা,
খ. পিতৃহত্যা,
গ. অর্হৎ হত্যা,
ঘ. দ্বেষচিত্তে বুদ্ধের শরীর হতে রক্তপাত এবং
ঙ. সংঘভেদ।
আমরা প্রতিদিন ভাল-খারাপ বিভিন্ন কর্মই সম্পাদন করি। কিন্তু আমাদের এই কর্ম সম্পর্কে সতত সজাগ থাকা প্রয়োজন। সর্বদা আমাদের মনে রাখতে হবে, শুভ কর্মের শুভফল আর অশুভ কর্মের অশুভ ফল। আর উপরোক্ত পঞ্চ গুরুকর্ম হতে সর্বদা নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। পরিশেষে বুদ্ধের পরিভাষায় বলতে চাই, কর্মই আমার স্বকীয়, আমি কর্মেরই উত্তরাধিকারী, কর্মই আমার যোনি বা জন্মের কারণ। কর্মই আমার বন্ধু, কর্মই আমার গতি, কর্ম কুশল হোক বা অকুশল হোক যেরূপ কর্ম আমি সম্পাদন করব, আমি সেরূপই ফল ভোগ করব।